পুলিশের প্রধানকে চার তারকা পদমর্যাদার চিফ অব পুলিশ (জেনারেল পদমর্যাদার) ও স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ করার দাবি করেছেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসে লিয়াজোঁ কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগসহ একাধিক দাবি তোলেন তাঁরা। পুলিশ সপ্তাহের পঞ্চম ও শেষ দিনের সমাপনী অধিবেশনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা এসব দাবি করেন।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে ওই মতবিনিময় সভা হয়। এতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। এ সময় সারা দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, আটটি মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাত রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা, পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে রাত ১০টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস রাজারবাগ মিলনায়তন–সংলগ্ন অস্থায়ী মিডিয়া কর্নারে সংবাদ ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী তাদের কর্মপরিধি বাড়ানো জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। দাবিগুলোর অধিকাংশই যৌক্তিক। এসবের মধ্যে যেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পূরণ করা যায়, তা দ্রুতই করবেন। আর যেসবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে, সেগুলো তাঁর অনুমতি নিয়ে করবেন।
সভায় উপস্থিত পুলিশের পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উপমহাপরিদর্শক ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। পুলিশের দীর্ঘদিনের দাবি স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে চার তারকা পদমর্যাদার (জেনারেল) চিফ অব পুলিশ করার দাবি ছিল তাঁদের। এতে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির পথ সহজ হবে। বিভিন্ন দূতাবাসে লিয়াজোঁ কর্মকর্তা পদ তৈরি করে সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চান তাঁরা।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেন, অর্থবছর শেষ হয়ে গেলে পুলিশের উন্নয়নে যে বাজেট থাকে, তা আর কাজে লাগে না। সেই কারণে পুলিশের যে বাজেট বরাদ্দ হয়, তা পুলিশ বাহিনীকে দেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তিন বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমান) পদক দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের পদক পুলিশ বাহিনীকে দেওয়ারও দাবি তোলা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের কর্মকর্তাদের দাবিদাওয়া শোনেন এবং তা পূরণের আশ্বাস দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে ৮২ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় র্যাবকে ঢেলে সাজাবেন কি না, এমন প্রশ্ন সাংবাদিকেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে করেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিগত দিনের ইতিহাস ঘাঁটতে চান না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাব জনগণের পাশে থেকে জঙ্গি–সন্ত্রাস দমন, জলদস্যু, ভেজাল ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখন র্যাব জনগণের আস্থার প্রতীক।
এর আগে গতকাল সকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।