মোস্তফা মননের একগুচ্ছ কবিতা

ভোর আসছে
ব্যক্তি যখন বলাৎকার করে,
তখন সমাজ বিচার করতে পারে
সমাজ যখন বলাৎকার করে
তখন রাষ্ট্র একটা ভূমিকা নিতে চায়
আর রাষ্ট্র যখন নিজেই বলাৎকার করে মুর্হুমুহু
তখন ব্যক্তি আর সমাজ মুখ লুকায় কৃষ্ণগহ্বরে।
আপনি জেনে নিবেন
শুধু মাত্র পতনের মুখে রাষ্ট্র বলাৎকারের সিদ্ধান্ত নেয়
শুধু মাত্র পতনের মুখেই রাষ্ট্র তার চরিত্র হারায়,
আমাদের আশার জায়গা এই যে
যখন বলাৎকারের সংখ্যা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে
তখন গণমানুষও জেগে ওঠে ধীরে ধীরে
তখন রাষ্ট্র আর সামলাতে পারে না তাদের।
পতন হয় বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার, পতন হয় ক্ষমতাশীনদের
রাষ্ট্র তখন হয়ে ওঠে জনগণের অধীন।
খুব বেশি দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না
ভোর আসছে।
আমাকে হত্যা না করার একটি কারণও অবশিষ্ট রইলো না
আমাকে হত্যা না করার
একটি কারণও অবশিষ্ট রইলো না
এখনই সময়, এই আগমনী শীতের হাত ধরে
দূরের কুয়াশার হাত ধরে
ধবধবে ভরা জোসনার হাত ধরে
আপনারা আপনাদের কর্তব্য পালন করুন,
আমাকে হত্যা করার এখনই উপযুক্ত সময়।
প্রতি রাতে আমি আমার প্রিয়ার বাহুতে ঘুমাই
চোখ মেলে তাকে দেখি
সে চোখ খুলে রাখে আগেই,
আমি তাকাই তার চোখের দিকে
সে মৃদু হেসে সকালটা আলোয় ভ’রে দেয়।
ঘরের বেড়ার ফাঁক গলে সকালে আলো আসে কি না বুঝতে পারি না,
তবে বুঝি, ঘরটা আলোয় ভরা, তার চোখ আলোয় ভরা
তার হাসি আলোয় ভরা,
তখন আমার সকালটা আলোয় ভ’রে ওঠে।
আজ সে নেই
সে সবুজের কাছে গিয়েছে
দূরের কুয়াশার প্রলেপ গায়ে মাখতে গিয়েছে
সে বড় নদীর বা বড় পুকুরে ধারে গিয়েছে
সাতার কাটতে। এখন আমি একা।
আজই উপযুক্ত সময়
আপনারা আপনাদের কর্তব্য পালন করুন
আমাকে হত্যা করুন।
প্রথম যৌবনে আমি লেখক হতে চেয়েছি
এখন আমি তাই
প্রথম যৌবনে আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছি
এখন আমি তাই
প্রথম যৌবনে আমি যেমনটা ভেবেছি
এখন আমি তাই।
বেশ কিছু বছর ধরে আমি প্রকাশক হতে চেয়েছি
হয়তো হয়ে যাবো।
আপনারাতো লেখক আর প্রকাশকদেই হত্যা করেন।
নদীর মতো প্রবাহমান চিন্তাকেই হত্যা করেন
বড় গাছের মতো সবুজ পাতাকেই হত্যা করেন
ঘাসের উপর টলমলে শিশির বিন্দুকেও হত্যা করেন।
সে হিসেবে আমাকে হত্যা করতে পারেন
কারণ আমি নতুন চিন্তা পছন্দ করি।
আমাকে হত্যা করতে পারেন
কারণ আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পছন্দ করি।
আমাকে হত্যা করতে পারেন
কারণ আমি ভালোবাসতে পারি।
সব ভেবেই বলছি
আমাকে হত্যা না করার একটি কারণও অবশিষ্ট রইলো না।
খুব সাবধানে, খানিকটা প্রকাশ্যে ধারালো চাপাতি দিয়ে
আমাকে হত্যা করতে পারেন।

 

মৃতের সমান অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে আছি
মৃতের সমান অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে আছি
সম্ভবত এটাকে বেঁচে থাকা বলে না
অন্ধের সমান অভিজ্ঞতা নিয়ে পথ চলি
সম্ভবত আমাকে পথিক বলা যাবে না
আজন্ম বধীরতা নিয়ে চুপসে আছি
সম্ভবত এটাকে জীবন বলে না।
এই যে বেঁচে থাকা, এই যে পথচলা এই যে বধীরতা
এ জন্য আমাকে মানুষ বলতে পারেন।
এই শতকে এই সময়ে এই সমাজ ব্যবস্থায়
মানুষেরা বেঁচে থাকে অন্ধত্ব নিয়ে, বধীরতা নিয়ে, পথ হারিয়ে,
বোধ, বুদ্ধি, আর বিবেচনা লুপ্ত করে।
আমি জানি, এই কবিতাটা সেদিন বাতিল হয়ে যাবে
যে দিন মানুষ মানবীয় গুণাবলী নিয়ে সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে
আমি চাই, আমার এই কথাটা দ্রুত বাতিল হোক
আমি আমার এই কবিতার কথা বাতিল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

 

বেচে দিন
বিলবোর্ডে মোড়া শহর। শহর জুড়ে বিলবোর্ড
এখানে সব কিছু বিক্রি হয়।
বিক্রি হয় গলির মোড়, গলির মোড়ের মানুষ, রাস্তা আর রাস্তার মানুষ,
রাজপথ আর রাজপথের মানুষ, সব বিক্রি হয়।
সুন্দর বিক্রি হয়, অসুন্দরও সুন্দরের মোড়কে বিক্রি হয় নির্ভেজালে
বেচে দিন সব কিছু আপন বিশ্বস্ততায়
বেচে দিন সব কিছু পরম মমতায়
বেচে দিন আপনার নীতি আর নৈতিকতা
সামান্য কিছু টাকায়।
বেচে দিন মানব আর মানবীয়তা- সামান্য কিছু টাকায়।
বেচে দিন সম্পত্তি আর সম্পর্ক তাতে যদি সামান্য কিছু নগদ পাওয়া যায়,
বেচে দিন নিজেকে
যত বার
যত খুশি
যত ভাবে
বেচা যায়
বেচে দিন।
বেচে দিন আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হোন পরিবারে
বেচে দিন আর সবচেয়ে মূল্যবান আর সম্মানীত ব্যাক্তি হোন- সমাজে
গোত্রে, আর টেলিভিশনে।
শুধু বেচে দিন-যা পান, যা পাবার সম্ভাবনা আছে, যা ধারণা করতে পারেন,
যা ধারনা করা যেতে পারে, যার ধারনার ধারনা ভবিষ্যতে-
বেচে দিন তার সবটাই।
শুধু বেচে দিন, আর বেচে দিন।

(সংবাদটি ৬৬৩ বার পঠিত)

About গজারিয়া নিউজ

View all posts by গজারিয়া নিউজ →